কিছুদিন আগে কর্ণফুলী নদীর সাম্পান মাঝি মো বাবুল হঠাৎ ডলফিন দেখেছেন। (প্রথম আলো, ৪ঠা অক্টোবর, ২০১৫)। আপাতঃদৃষ্টিতে খবরটি আনন্দের হওয়ার কথা; কিন্তু আসলে তা বিষাদের, কেননা আগে কর্ণফুলী নদীতে ডলফিন নিত্যদিনের দৃশ্য ছিল, বিশেষত শীতের সময়। কিন্তু এখন আর ডলফিন দেখা যায় না। মোঃ বাবুল শেষ কবে ডলফিন দেখেছেন মনেও করতে পারছেন না। দূষণ, দখল, এবং অতিমাত্রায় নৌচলাচলের কারণে কর্ণফুলীর ডলফিন এখন একটি অপসৃয়মান প্রজাতি। গবেষকদের ধারণা যে, কর্ণফুলী, সাংগু ও হালদায় এখন বড়জোর ১৫০টি ডলফিন অবশিষ্ট আছে।
কর্ণফুলী ও বাংলাদেশের অন্যান্য নদীর ডলফিন বিশারদদের নিকট গ্যাঞ্জেস ডলফিন নামে পরিচিত, এবং স্থানীয়ভাবে শুশক কিংবা হুতোম নামে অভিহিত। দিন্ দিন এই প্রাণীর সংখ্যা কমে যাচ্ছে। ভারত কর্তৃক প্রত্যাহারের কারণে নদ-নদীসমূহের প্রবাহ কমে যাওয়া নিশ্চয়ই এর একটি কারণ। কিন্তু আরেকটি বড় কারণ হলো নদ-নদীসমূহের দূষণ। মারাত্মক দূষণের কারণে বাংলাদেশের নদ-নদীর পানি কোন প্রকার প্রাণীর জীবন ধারণের জন্য অনুপোযোগী হয়ে পড়ছে। বলাবাহুল্য যে, এই দূষণের জন্য বাংলাদেশ নিজেই বেশী দায়ী। কৃষিতে ব্যবহৃত রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ঔষধ, শিল্প বর্জ্য, শহরের অপরিশোধিত পয়ঃনিক্ষেপ, প্রভৃতি নদ-নদীর পানি দূষণের কয়েকটি মূল উৎস। এসব উৎসের দূষণ প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে না। বেন ও বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) লাগাতারভাবে নদ-নদী দূষণ প্রতিরোধের জন্য সরকার ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য মহলের উপর চাপ প্রয়োগ করে আসছে। কিন্তু এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় অগ্রগতি পরিদৃষ্ট হচ্ছে না। বেন আশা করতে চায় যে, কর্ণফুলীর অবশিষ্ট ডলফিনের একটির হঠাৎ আবির্ভাব সকলকে পুনরায় নদ-নদীকে দূষণমুক্ত ও বিভিন্ন জলজ প্রাণীর বসবাস-উপযোগী রাখার প্রয়োজনীয়তার প্রতি মনোযোগী হতে উদবুদ্ধ করবে।