নভেম্বর ৩০ তারিখ থেকে ফ্রান্সের প্যারিস শহরে বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন শুরু হচ্ছে। আনুষ্ঠানিকভাব এটি হলো জাতিসংঘের জলয়ায়ু বিষয়ক কাঠামোগত চুক্তিতে সাক্ষরকারী দেশসমূহের ২১তম সম্মেলন (কপ-২১)। এবারের এই সম্মেলনের বিশেষ গুরুত্ব, কেননা আশা করা হচ্ছে যে, এই সম্মেলনে জলবায়ু পরিবর্তন সৃষ্টিকারী উষ্ণতা বৃদ্ধিকারক গ্যাস (উবগ)-এর পরিমাণ হ্রাসের লক্ষ্যে একটি কার্যকর আন্তর্জাতিক চুক্তি সাক্ষরিত হবে।
প্রায় ছয় বছর পূর্বে কোপেনহ্যাগেন শহরে অনুষ্ঠিত কপ-১৫-তে বিশ্ব তাপমাত্রা বৃদ্ধি দুই ডিগ্রী সেন্টিগ্রেডে সীমাবদ্ধ রাখার লক্ষ্য ঘোষিত হয়েছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক যে, এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণে বিশ্বসম্প্রদায় ব্যর্থ হয়েছে। ফলে বায়ুতে কার্বনের ঘনত্ব ৪০০ পিপিএম ছাড়িয়ে গেছে এবং বার্ষিক উবগ উদগীরণের পরিমাণ ৪০ গিগাটন ছাড়িয়ে গেছে। ফলে উষ্ণতা বৃদ্ধি দুই সেণ্টিগ্রেডে সীমাবদ্ধ রাখা যাবে কীনা, সে বিষয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। এরূপ পটভূমিতে অনেকেই মনে করছেন যে, প্যারিসে অনুষ্ঠিতব্য আসন্ন কপ-২১ হবে “মেইক ইট অর ব্রেইক ইট” মূহুর্ত। হয় এই সম্মেলন থেকে সফলযাত্রা শুরু হবে; নতুবা আর কখনোই জলবায়ুর বাঞ্ছিত নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হবে না।
সাম্প্রতিক কিছু ঘটনা, মানুষের মধ্যে উৎসাহের সঞ্চার করেছে। তারমধ্যে রয়েছে, উবগ হ্রাস বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যকার অধিকতর সমঝোতা। উভয় দেশই উবগ হ্রাস ও জলবায়ু পরিবর্তন রোধে সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ওবামা কর্তৃক সাম্প্রতিক কীস্টোন পাইপলাইন প্রকল্প বাতিল করাটাও অনেকে ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন।
বেন-ও আশাবাদী হতে চায়। বেন চায় যে, উন্নত এবং উন্নয়নশীল সবদেশই জলবায়ু পরিবর্তন রোধে স্বীয় করণীয় সম্পাদনে আন্তরিক হবে। সাম্প্রতিক অভিজ্ঞতা প্রমাণ করেছে যে, জলবায়ু পরিবর্তন দ্বারা শুধু উন্নয়নশীল দেশসমূহই ক্ষতিগ্রস্থ হবে না, উন্নত দেশসমূহও এর ক্ষতিকর প্রভাব দ্বারা আক্রান্ত হবে।
মাত্র কিছুদিন আগে প্যারিস শহর মৌলবাদী সন্ত্রাসের শিকার হয়েছে। একশত তিরিশজন মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। অন্যান্যদের মতো বেন-ও এ বর্বর হত্যাকান্ড দ্বারা মর্মাহত। এই বিয়োগান্তক ঘটনার প্রেক্ষিতে প্যারিসে কপ-২১ অনুষ্ঠিত হবে কীনা সে বিষয়ে সংশয় দেখা দিয়েছিল। বেন আনন্দিত যে, ফ্রান্সের জনগণ ও সরকার তাদের বেদনা সত্ত্বেও কপ-২১ অনুষ্ঠানের অংগীকার থেকে পিছিয়ে আসে নি। বেন তাদের এই স্পৃহাকে অভিবাদন জানায় এবং মনে করে যে, কপ-২১ সম্মেলনে জলবায়ু পরিবর্তন রোধে কার্যকর চুক্তিতে উপনীত হওয়ার মাধ্যমেই বিশ্ববাসী ফ্রান্সের জনগণের ত্যাগ ও স্পৃহাকে উপযুক্ত সম্মান জানাতে পারে। কপ-২১ সফল হোক!